শনিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

।। কবিতা : শানু চৌধুরী ।।




আত্মহত্যা

১.

অলৌকিক তারাদগ্ধ রাত থেকে ছুটে যাচ্ছে আত্মহত্যা। এই প্রবল আত্মার নড়াচড়ায়, স্তন খুঁটে ফেলে যারা হয়েছিল দৃশ্যের শ্মশানবন্ধু। তারা। কোনো নৈশবিদ্যালয়ে ফেলে এসেছে অন্তিম জ্বলন্ত কাঠ। কোনো পাপ নেই। শুধু প্রশংসার ভিতরে অন্ধ পেঁচার মহিমাহীন খেলাধুলো মাঘের পশম নিয়ে উড়ে যায়। এক মুখ বারবার কাঁপে। আর অমূলক জমাট বাঁধা রক্ত, ক্রমশ ক্ষীণ আতঙ্ক নিয়ে ঢুকে যায় আমাদের চেতনারত হ্রদের অন্বয়ে।


২.

মর্গের আলোয় ঢুকে যাচ্ছে তোমার প্রণয়। ব্রক্ষ্মতালুর নীচে যে সন্দেহ প্রবণতা, তাকে রূপ দাও। যেভাবে আক্রান্ত শিলা আদরে বসায় নির্ভীক পুংকেশর। তোমার রোপন শূদ্র হলে এক ব্রাক্ষ্মণ জড়িয়ে ধরবে বিমর্জিত রূপোলি চিরুনি- যার থেঁতলান দাঁতে শিখে ফেলা যায় ভাঙা সিঁদূরের সন্তাপের কথা।


.

স্বচ্ছতা তোমার লালিত্য থেকে কুড়িয়ে এনেছি নরম মুখাগ্নির  ইঙ্গিত অথচ সোয়েটার ছিঁড়ে যাওয়া কুমারী ব্যথার কথা এই পথ আর পাতার পৃথুলতায় পেয়েছে দেবতার ঠাঁইএখন চিমনি পুড়ে যায়। আর ভবিষ্যতের ডিমে দেখি ফেটে গেছে... পালিয়ে যাওয়া ও শনাক্তকরণের ক্ষমা।


.

নিকট ভাষার দিকে নদী ও সন্ধ্যানামা ওষুধের দোকান এই সকল বিউগল নত হলে যতটুকু ভালবাসা, তার ছবি থেকে সরে গেছে মহাসৈকত মায়াধূপ, জ্বেলে আসি ছিটানো জোৎস্নায় এত মানতের রাস্তায়। যেভাবে কারও মুখের নিষ্ক্রিয় কুয়াশা, লিখে গেছে পরিচ্ছন্নতা


৫.

নাভিকাটা ঊষা। কঞ্চির মতো ফুটে ওঠা সকালে ভরিয়ে তুলেছিল গূঢ় মুখাভিনয়। যে বাগান শিখেছে। তার ফুলের কাছে ফেটে যাওয়া ধ্বনি, পরাগ হয়না কখনো। এ ঈর্ষামিশ্রিত সর্বনাশ। তোমার কাছে এনেছি নালিকুলের পয়মন্ত ঢেউ। যেখানে হাতের মাপে পড়ে আছে গোল গোল চুড়ি আর  কাদা লেগে যাওয়া ঘোমটায় ইটভাটার ছাঁচ।


.

সন্ধের ঘোড়ায়, নালের প্রচন্ড শব্দ হয় যেখানে স্থির কোনো তরঙ্গ ফিরে আসে সরোদের আয়ুরেখা ধরে ছাগলের সারি তার নিকটে জ্বেলে রাখে আয়ুবহনের শিখা আর কামারশালা থেকে দূরে কালো হাপরের কোনও জন্ম অফুরন্ত গুনে  চলে শাশ্বত তামসিকতা 


.

পুষ্যানক্ষত্রের দিকে আমি ঘুমিয়ে আছি তুমি বলে দিতে পারো মীনরাশির কোষ্ঠীবিচারঘুঘুদের ফেনা, গাঢ় হয়ে এলে; কয়েকটি দীপকের পর্যটন তুমি তো জানো যেখানে রাজমুকুট নেই সেখানে নরম হয় ভাত তবুও তোমার খাঁচায় কেন ঢিল মেরে জাগিয়ে রাখতে চাইছি খসে পড়া পালকের হাড়গোড় তুমি তো জানো।


.

 মুখ থেকে উড়ে গেল কুপির আশ্বাস একটা হাড় নিয়ে খেলতে খেলতে পোতাশ্রয় ভেঙে গিয়ে জাহাজ দেখেছিল টেরাকোটার বাগিচা সেখানেই দরজা খুলতে খুলতে আর খুলতে সঙ্কুল হয়ে পড়েছিলাম আর কোনো নির্বাক দুঃখের লাইন সেই নৃশংসতাকে চেপে তৈরি করেছে মাটির পুতুল যার রক্তগন্ধে ব্যাটারি কারখানার শ্রমিক লেগে থাকে


.

কতদূর সে এভাবে যাবে করবীফুলের ধরনে একা লন্ঠন হাতে সন্ধের মাজারে এখন রেমপার্ট ভেঙে যায়, যেখানে চিবুক তুলে দাঁড়ানো বাৎসল্য খালি পায়ে চষে বেড়ায়! তোমাকে শেখাব অ- এর কান্না, এমন নির্ভর হয়োনা দেখবে তোমার ভরসা থেকে খিদের পিত্ত চুঁইয়ে পড়ছে রোজ


১০.

জানলার ঘাস ভেঙে যাওয়ার আগে ছাত্রীর খাতায় লালরঙ এসে বসে এই থেকে যেটুকু অঙ্ক কষতে পারি তার ভিতর একটা চিৎকারের হরিণ এঁকে দিই ক্লান্তিকর প্লীহা! ছুটে যাচ্ছে মাছিদের সঙ্গে উড়তে উড়তেআমার সরসতা, আগুনের পাশে বসে তখন আলোর স্বভাবে জ্বালছে লাঙলের উদয়


১১.

এই শরবন,পবিত্র এখনও দীর্ঘশ্বাসে অয়ন বয়ে নিয়ে যাচ্ছে যে সুখপ্রদ কাফেলা তার সন্ধ্যা-উপসনার পায়রাকে ছিনিয়ে নিয়ে তুমি বলেছ অবসাদ মাংসের মেঘ যে গন্ডুষ ধরে আছে, তাকে বলে দাও ঘনরামের ভণিতার কথা


১২.

ছায়া তোমার আমাকে ভরিয়ে রাখছে এই মুহুর্তের শেষ কবিতা নষ্ট করার স্বপ্ন থেকে, কাঁটা খুলে যায়। ভয়পাখি জেগে ওঠে জলের যোগানে সান্দ্র ঝরণা যখন করুণা হয় না তা কেবলই মৃন্ময়! মৃত্যুর গায়ে এঁকে রাখে দূর হেঁটে চলা মৃত্যুমুখের ফোটা টিউলিপ।


১৩.

এখনও প্রহর শূণ্য হলে, জেগে থাকে আমলকী বন তোমার নির্মল চলাচলের ধাত গম্বুজের খিলানে যে মসজিদ সেখানে দাঁড়িয়েছি, অবিবেচনার হাসি নিয়ে কোড়াপাখি অবলা তিতির রাতের নিচে ফুঁসছে যে মোষের মর্মান্তিক পেট তার অলংকারে জেনো, রাখা আছে আমাদের পূর্বাভাসের অবলুপ্ত কাক


১৪.

হে জগন্নাথ! তোমার হাতের দূরত্বে রথের ছায়ামরু। অথচ দেরাজের শূণ্যতা টলটল করে তুকতাকের সরায় এখন আকাশ চলে যায় দুর্বল কপিলাবস্তুর জানালায় সেখানে বোনের মতো সাবেকি প্রতিমা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেউ



১৫.

ফলের আকারে ভেঙে যায় মহুয়া
তবু এই করোজ্বল গ্রাস টলটল করে
ভিক্ষুকের আভায়!
যে হাত দুখানি তার নোয়ায় বাঁধানো ছিল
সংসারের ভিড়ে উড়ে গেছে তার অজস্র শুশ্রুষা!
একবার। নিশ্চুপ হওয়ার আগে।
খাঁ খাঁ করে যে মনোরোগের দুপুর
তার অন্নকূটে সুসময়ের বিবাহ
টাঙিয়ে রাখে সারনাথের আকারে সজল আতর


1 টি মন্তব্য: